top of page

চপল আলোতে ছায়াতে
কেন জানি না, শারদীয় দিন কাছে এলে হৃদয়ের কোন গোপন থেকে বারে বারে তার ডাক শুনি। বারে বারে হয়তো আর আসা হবে না— সেই কারণেই মনের মন্দরে অলীক ফুলের নিবেদন চলে। ডাক শুনি আর নদী তীরে, সরোবরে মন ফিরে ফিরে যায়, কাশবন পেরিয়ে দুয়ারে শুনি শঙ্খধ্বনি।           
রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, ‘আজি মাঠে মাঠে চলো বিহরি,/ তৃণ উঠুক শিহরি শিহরি।/ নামো তালপল্লববীজনে,/ নামো জলে ছায়াছবিসৃজনে।/ এসো সৌরভ ভরি আঁচলে,/ আঁখি আঁকিয়া সুনীল কাজলে।’
বঙ্গদেশে ফি বছর শরৎকাল এলে, এই চির মুগ্ধতায় ভেসে চলে মন দূর নিখিলে, জুঁইস্মৃতির কবেকার বাল্যে। 
শরৎকালের ছবিটি এঁকে রবীন্দ্র বলছেন, ‘‘বায়ু-হিল্লোলের মধ্যে একটি চিরপরিচিত স্পর্শ প্রবাহিত হইতে থাকে, কাজকর্ম ভুলিয়া যাইতে হয়; বেলা চলিয়া যাইতেছে, না মন্ত্রমুগ্ধ আলস্যে অভিভূত হইয়া পড়িয়া আছে, বুঝা যায় না।’’
শরৎকালীন ভোরের ফ্রেমটি আমার চিরদিনের। স্বপ্ন... স্বপ্ন... শিশিরে ভেজা গাছ-পাতা-ফুল। স্বপ্নে দেখা, শিউলিতলায় সেই ফুল কুড়ানো মেয়েটি। তাকে আমি কখনও দেখেছি কিনা— আজ আর মনে পড়ে না। শরিকি ঠাকুরদালানে খেলা— খেলা চলে, খেলা ভাঙার খেলা। এক একটা দুপুর মন-উদাস, নদীর ধারে কাশবনে পথ হারানোর নেশা। ‘কত আকুল হাসি ও রোদনে,/ রাতে দিবসে স্বপনে বোধনে...!’

‘পুজো’ কথাটার মানে ইদানিং রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে এমন করে, খুব নিভৃতেও বলতে ভয় হয়। অথচ, আমাদের বাঙালিদের কাছে দুগ্গোৎসব মানে সংস্কৃতির একটা বড় পাঠ ছিল এই সেদিনও। স্বপ্নে ভাবি, এখনও ভাবি— পুজো এলেই, ঢাকে কাঠি পড়লেই— মনে মনে দৌড় দিই। কিন্তু স্বপ্নের পথে আর সেই বাল্যের পুজোতলায় পৌঁছনো হয় না! কেন হয় না, কেন তেমন করে আর পারি না আমরা? স্মৃতি ফিকে হতে হতেও মনে পড়ে— ভোরের হাওয়ায় ঘুরত শরৎকালীন টহলগান। সন্ধে নামলে মস্ত, কালো আকাশের নীচে গাঁ-ঘরে প্রদীপ জ্বলত। দীপালি গ্রাম বিভাসে, রামকেলিতে শুনত আগমনী গান— ‘আমার গৃহে গৌরী এল/ নাশিতে আঁধার রাশি।’ এখনও কি এমন সব গান শোনা যায়? 
দিন কয়েক আগে কলকাতা আর কলকাতার আশপাশের কয়েকটি শহরে যেতে হয়েছিল— রাস্তার দু’পাশে বিজ্ঞাপনের চমক আর পুজো-প্রচার দেখতে দেখতে ভাবছিলাম কোথায় হারাল আমাদের সেই মনকেমন করা পুজোর উদাস দিন? কি ছিল না— মনে করতে পারছি না— ‘আহা শ্বেতচন্দনতিলকে/ আজি তোমারে সাজায়ে দিল কে।/ আহা বরিল তোমারে কে আজি/ তার দুঃখশয়ন তেয়াজি—/ তুমি ঘুচালে কাহার বিরহকাঁদনা,/ ওগো সোনার স্বপন, সাধের সাধনা॥’ এভাবেই আরও একটা মন উদাস করা ভৈরবী শরৎকাল পার হয়ে যাচ্ছে! মন উদাস করা গোটা একটা পুজো! 

শান্তিদেব ঘোষ শুনছিলাম, শান্তিনিকেতনে ওঁর বাড়ির সামনে দিয়ে যতোবার যাই, এই গানটি আমি শুনে ফেলি—‘ভেসে যেতে চায় মন,/ ফেলে যেতে চায় এই কিনারায় সব চাওয়া সব পাওয়া,’... শান্তিদেব! 
আমার কাছে পুজো মানে, ফি বছর এই গানের রেকাব, এই স্মৃতি-উপচার, এক মণ্ডপ থেকে মণ্ডপে কাঁসি হাতে সেই কবেকার দেখা বাজনদারের ছেলেটির সঙ্গে দৌড়! 
সেই যে রবীন্দ্র লিখেছিলেন : শরৎকাল স্মৃতির কাল এবং বসন্ত বর্তমান আকাঙ্ক্ষার কাল। বসন্তে নবজীবনের চাঞ্চল্য, শরতে অতীত সুখদুঃখময় জীবনের পূর্ণতা। বাল্যকাল না গেলে যেন শরতের অতলস্পর্শ প্রশান্তি অনুভব করা যায় না!

 

শারদীয় এখন শান্তিনিকেতন

SKU: PUJA23EKH
₹300.00 Regular Price
₹270.00Sale Price
    bottom of page